মানুষ যে পরিবেশে বেড়ে উঠে সেটাই তার জীবনকে প্রভাবিত করে।সে একটি সুনির্দিষ্ট সমাজের গন্ডির মধ্যে থাকে।এই সমাজের চারপাশের ছোঁয়া পেয়ে সে এক সময় শিশু থেকে একজন পরিপূর্ণ মানুষে রুপ নেই।এই ক্ষণিক সময়ের মধ্যে তাকে অনেক কাজ করতে হয় হউক সেটা নিজের উন্নয়নের জন্যে কিংবা তার সমাজের উন্নয়নের জন্যে অথবা দেশের জন্যে।আমরা আজকে এমন একজন তরুণ উদ্দ্যোক্তা,ছাত্রনেতা,ডিজিটাল ক্রিয়েটর,ভ্লগার ও সংগঠকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো যিনি সকল ধরনের প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে চাবাগানের নির্মল পরিবেশে বড় হয়েছেন।বলছি শমসেরনগর ( কানিহাটি) চাবাগানের ইয়ুথ আইকন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র সন্তোষ রবি দাস অঞ্জনের কথা।যার জন্ম ১৯৯৬ সালের ৭ই জানুয়ারী শমসেরনগর ইউনিয়নের কানিহাটি চাবাগানের চা-শ্রমিক কমলি রবি দাসের কুড়েঘরেতে।
নানাধরনের রীতিনীতি,নিয়ম-কানুনের এই চাবাগানের গন্ডিতে তিনিও বড় হয়েছেন অন্য আরো ৫টা সাধারণ ছেলেদের মতো।চাবাগানের পরিবেশে জন্মালেও ছোট থেকেই তার ইচ্ছে- অন্যদের চেয়ে একটু ভিন্ন কিছু করার।ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার পর অসংখ্য বিষয়ের ভিড়েও সবাইকে তাক লাগিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মার্কেটিং বিভাগে।বাজারজাতকরণ ও বিপণন নিয়ে পড়াশোনা,এমন একটা অসাধারণ বিষয়কে আপন করে নিয়েছেন।এরপর বিভিন্ন সামাজিক সংঘটনের স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে যোগদান করেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলাকালীন সময়ে তিনি দেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষের একটি বড় ছাত্ররাজনৈতিক দলের কর্মী হিসাবে অনবরত কাজ করে গিয়েছেন।তবে তৃতীয় বর্ষের শেষের নিজের চা-জনগোষ্টির কথা চিন্তা করে,তাদেরকে সবার সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে দীর্ঘ ৩৮ বছর পরে অনুষ্টিত হওয়া ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র সমাজ সেবক সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন।পরিবারের পছন্দকে গুরত্ব দিয়ে,নিজের পছন্দের বিষয়কে ভালবেসে সম্মানের সহিত সম্মান শেষ করে Anjon’s এর স্বত্তাধিকারী হিসেবে যাত্রা শুরু করেন।এলাকার বিভিন্ন জিনিসের সুস্পষ্ট ধারণা,এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাফেরা ও এলাকার ঐতিহ্যবাহী গিফট সামগ্রী ক্যাম্পাসের পরিচিত প্রিয় মুখদেরকে গিফট হিসেবে দেওয়াটা,এই আইডিয়া উদ্যোক্তা হতে বার বার অনুপ্রেরণা জুগায়,যা বড় হয়ে এই অনুপ্রেরণার ইচ্ছাশক্তি বাস্তবায়নের নেশায় পরিনণত হয়।পরবর্তীকালীন তিনি তার এলাকার সাতকড়া,চা,ইয়ুথ ফ্যাশন এর বেচাকেনা, ট্যুর গাইড সেবা প্রদান ও বিভিন্ন ইভেন্ট প্লানার হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি নিজের অভিজ্ঞতা ও নেটওয়ার্কিং কে এই ব্যবসায়ের উন্নয়নের জন্যে কাজে লাগিয়েছেন।তবে এই যাত্রা তার জন্যে খুব একটা সহজ ছিল না।পরিবার,আত্মীয়-স্বজন,পাড়া-্প্রতিবেশি কিংবা আমাদের সমাজ ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত তাকে তার স্বপ্ন থেকে আলাদা করতে চাইলেও তার ইচ্ছাশক্তি,দৃঢ় মনোবল ও চেষ্টার কারণে সন্তোষ রবি দাস অঞ্জন তার ব্যবসায়ে সলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছেন। তার এই ব্যবসায়ের কল্যাণে অনেক চা-শ্রমিক সন্তানের সাময়িক আর্থিক উপার্জনের জায়গা সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকার লোকজন মনে করেন।তার এই ব্যবসায়ের ফলে চা-বাগানের উন্নয়ন তথা সমগ্র চা-জনগোষ্টির উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে।বর্তমানে তিনি একজন তরুণ উদ্যোক্তা ছাড়াও একটি বিদ্যার্থীর দৃষ্টি সঙ্ঘের সভাপতি হিসাবে নিযুক্ত আছেন।সন্তোষ জানালেন,কাজের পরিধি আরো বেড়ে যায় যখন বিশ্ব বিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদের যুগ্ম সচিব হিসাবে নিযুক্ত হয়। চা-বাগানের ছেলে-মেয়েদের ইউনিভার্সিটি এডমিশন টেস্ট এর জন্যে বিভিন্ন চাবাগান থেকে আসা,ছেলে-মেয়েদের, তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা, পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া এইসব কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি।পরবর্তীকালে সফল পরীক্ষার্থীদের জন্যে হলের সীট ম্যানেজ করার ব্যাপারেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।তিনি বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ভ্লগ করে থাকেন যার মাধ্যমে চাবাগানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তথা সিলেটের বিভিন্নরকম ট্যুরিস্ট প্লেসের পরিচিতি, যাতায়াত ব্যবস্থা ও ইতিহাস তুলে ধরে থাকেন।তিনি নিজের সমাজের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে নানাধরণের স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে যাচ্ছেন।তিনি মনে করেন যে,মানুষের ইচছে,চেষ্টা,ধৈর্য্য আর পরিশ্রম থাকলে মানুষ অনেক দুর এগিয়ে যেতে পারে,আমিও একদিন একজন এ এস পি হয়ে দেশের প্রান্তিক জনগনের সেবা দিয়ে যাবো।আমার ভবিষ্যৎ মংগলের জন্যে প্রার্থনা করবেন।